মেহেরপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে চলছে রমরমা "জুয়া"। গত (৩ জুন) মঙ্গলবার মেহেরপুর নতুন বাস টর্মিনালে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এই মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলা উদ্বোধনের পর থেকে আয়োজকেরা অবৈধভাবে প্রতিদিন লটারির টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও ফাঁকি দিচ্ছে সরকারকে ভ্যাট আয়কর।
মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, সোনাসহ ছোট-বড় নানা পুরস্কারের চটকদার বিজ্ঞাপনে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হচ্ছে। তবে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার নামে লটারি, সার্কাস, অশ্লীল নৃত্য হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন। এদিকে এসব লটারি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
জানা গেছে, স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নেওয়া এই মেলায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শর্ত জুড়ে দিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু শর্ত লঙ্ঘন করে মেলার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেহেরপুরে মেলার নামে শুরু হয়েছে লটারির জুয়ার ড্র। জেলার সব অঞ্চলে ইজিবাইকের মাইকিং করে লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে টিকিট কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন মাইকিং করে প্রলোভন দেখিয়ে ১০২টি বাক্সের মাধ্যমে টিকিট কাটা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে।
মেলার নামে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
এছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বাড়ছে, বেড়েছে ছিনতাই চুরি ও ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটেছে এতে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। লটারির এই নেশায় ধরেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও।
অপরদিকে পুরস্কারের লোভে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অভাব অনটন লেগে আছে সংসারে এনিয়ে পারিবারিক বিরোধ দিন দিন বেড়েইে চলেছে। রাত ১১টা বাজলেই বই-খাতা রেখে মোবাইল কিংবা ডিস ক্যাবল টিভি সেটের সামনে বসে পড়ে শিক্ষার্থীসহ খেটে খাওয়া মানুষ। একেকজনে ১০ থেকে ১শত টিকিটও ক্রয় করলেও ভাগ্যে জোটেনি একটি পুরস্কারও।
প্রকাশ্যে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভুমিকা পালন করছে।
গাংনী পৌর শহরের রাকিবুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, বাজারে মাইকিং করে লটারির টিকিট বিক্রি করছে, মোটরসাইকেল পাবো এমন আশায় ১৫টি টিকিট ক্রয় করলেও কোন পুরুস্কার পাননি তিনি।
মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী শাকিল জানান, ২০ টাকা দিয়ে মেলার মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এছাড়া বানিজ্য মেলা হলেও এখানে লটারির পাশাপাশি, সার্কাসের নামে অশালিন নৃত্যসহ অবৈধ কর্মকান্ড চলছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে মেলার আয়োজক স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান শিশিরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মেলা ঘিরে জনসমাগম ঘটনায় করোনা সংক্রামন বৃদ্ধির আশংখা স্বাস্থ্য বিভাগের। করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ৪ জুন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ডা: অধ্যাপক হালিমুর রশিদ স্বাক্ষরিত বার্তা দিয়েছে।
মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ,কে,এম, আবু সাঈদ বলেন, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মেহেরপুর শিল্প বাণিজ্য মেলায় অনেক মানুষের সমাগম হয় সে ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাক্স পরা উচিত।
মেহেরপুরের রাজস্ব কর্মকর্তা তানজিদ খান বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ রাজস্ব দিচ্ছে কি না বিষয়টা আমার জানা নেই অফিস খুললে খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো। মেহেরপুর পৌর প্রশাসক তরিকুল ইসলাম বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ পৌরসভায় কোন আবেদন করেনি আর পৌরসভা কোন অনুমতিও দেয়নি। তবে অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে প্রশাসক ব্যবস্থা নিলে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা করা হবে।
মেহেরপুর জজ কোর্টের পিপি সাইদুর রহমান রাজ্জাক বলেন, হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে ২রা মে থেকে ২রা জুন পর্যন্ত মেলার অনুমতি দিয়েছে। অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে মেলার নামে নানা অবৈধ কর্মকান্ড চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিও কেন্দ্রীয় যুগ্ন সমন্নয়ক ও মেহেরপুর জেলার সংগঠক এডভোকেট শাকিল আহমেদ বলেন, মেলার নামে অনৈতিক কর্মকান্ড গ্রহনযোগ্য নয়। আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুনেরাধ করেছি। মেলার অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে এনসিপির কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম জানান, শিল্প ও বানিজ্য মেলার নামে যদি অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালিক হয় তাহলে জেলা প্রশাসকের সহযোগীতায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিব।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, শর্তসাপেক্ষে মেহেরপুরের শিল্প বাণিজ্যমেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্ত লংঘন করে লটারি সহ অবৈধ কোন কিছু হলে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তরিকুল ইসলাম