কোটা সংস্কার আন্দোলন: জবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

 জবি প্রতিনিধি    ৫ জুলাই, ২০২৪ ১৮:৫৮:০০নিউজটি দেখা হয়েছে মোট 5 বার

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে।

প্রতিবেদক প্রতিবেদনটি লিখার আগ পর্যন্ত জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতোমধ্যে ২৩টি ডিপার্টমেন্ট এর ৬৬ টি ব্যাচ ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে ।

গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ব্যাচ (১৬,১৭ ও ১৮), ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ব্যাচ (১৬,১৭ ও ১৮), আইন বিভাগের -ব্যাচ (১৫,১৬,১৭ ও ১৮), মার্কেটিং বিভাগের ব্যাচ (১৭,১৮), দর্শন বিভাগের ব্যাচ (১৭,১৮), সমাজকর্ম বিভাগের ব্যাচ(১৮), আই.ই.আর বিভাগের (১৪,১৬,১৭ ও ১৮), গণিত বিভাগের ব্যাচ(১৮), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৭,১৮), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ব্যাচ (১৫,১৬,১৭ ও ১৮), আই.এম.এল বিভাগের ব্যাচ (১৪,১৫,১৬,১৭ ও ১৮), ইতিহাস বিভাগের (১৪,১৫,১৬,১৭ ও ১৮)।

পদার্থবিদ্যা বিভাগের ব্যাচ (১৭), লোক প্রশাসন বিভাগের ব্যাচ (১৭,১৮), নৃবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৬,১৭ ও ১৮), হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের ব্যাচ (১৭ ও ১৮), পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যাচ (১৬,১৭,১৮), সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৬), ইংরেজি বিভাগের ব্যাচ (১৫,১৬), রসায়ন বিভাগের ব্যাচ (১৪,১৫,১৬,১৭,১৮), ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ব্যাচ (১৪,১৫,১৬,১৭,১৮), উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৫, ১৬, ১৭, ১৮), প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ ( ১৭ ও ১৮)।

ক্লাস বর্জনকারী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন মিয়া বলেন, যদি এই কোটা ব্যবস্থা থাকে তাহলে কিন্তু মেধার মূল্যায়ন হবে না আর মেধার মূল্যায়ন যদি না হয় তাহলে পড়াশোনা করা ভ্যালুলেস হবে মেধাটা যাচাই হবে না এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা ক্লাস পরীক্ষায় বসব না সর্বাত্মকভাবে ক্লাস পরীক্ষা আমরা বর্জন করেছি।

ক্লাস বর্জনকারী আরেক শিক্ষার্থী শুভ আহমেদ বলেন, আমি মনে করি একটি স্বাধীন জাতি কখনো বৈষম্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা ছাত্র জনতা এক হয়ে আন্দোলন করে যাবো, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হয়। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের কোটা সংস্কার দাবি শীঘ্রই মেনে নিবে।

ক্লাস বর্জনকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ওমর ফারুক জিলন বলেন, কোটা প্রথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অন্যায্য। একজন সুনাগরিক এবং সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এটা মেনে নিতে পারিনা। অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পৌষ্য কোটা সহ সকল কোটা বাতিল করে মেধাবীদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

ক্লাস বর্জনকারী নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ছায়েম সরকার বলেন, কোটার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়ন করা হয়।স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক। এই ৫৩ বছরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেয়া হয়েছে। তাদেরকে এই জাতি সব সময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

তবে চাকরির ক্ষেত্রে তাদের সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনীদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া এখন যৌক্তিক পর্যায়ে পড়ে না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই যুক্তিতেই আন্দোলন করেছি এবং করবো। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো ধরনের কোটা পদ্ধতি চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেধাবীদের চেয়ে কম মেধাবীরা সুযোগ পেয়ে থাকে।

এতে কোনো প্রতিযোগিতা থাকে না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে মেধাবীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রশাসনে মেধাযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে, তা আর হয় না। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কম মেধাবী যদি প্রতিযোগিতা না করে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ঐ পদটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মেধাবীদের যুক্ত করা প্রয়োজন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোটা পদ্ধতির কারণে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে মেধাবীদের সুযোগ দিতে হবে এবং কোটা প্রথার অবসান করতে হবে। "কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক"।

জবি প্রতিনিধি