শিক্ষকের খাতা দেখার ভুলে মানসিক ভারসাম্যহীন মেহেরপুরের আলমাস

 তরিকুল ইসলাম    ১৮ নভেম্বার, ২০২৩ ১১:১৮:০০নিউজটি দেখা হয়েছে মোট 18 বার

আলমাস হোসেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের শিক্ষার্থী। এক সময় মেধাবী থাকলেও ২০১০ সালে শিক্ষকদের খাতা দেখার ভুলে এখন সে মানসিক ভারসাম্যহীন। লেখাপড়া ও কথাবলার ভাবভঙ্গি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। মন ভালো থাকলে বই খাতা নিয়ে মনযোগী হয়ে পড়ে লেখাপড়া উপর। বাংলার পাশাপাশি কখনো কখনো কথাও বলেন ইংরেজিতে।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেধাবী আলমাস প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করে আসছিল। ২০১০ সালে নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ায় সময় শিক্ষকদের খাতা দেখার ভুলে রোল নম্বর প্রথম স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থান হয়। পরে খাতা চ্যালেঞ্জ করে ২০ নম্বর বেশি পেয়ে আবারো প্রথম স্থান অর্জন করে আলমাস। শিক্ষকের এই ভুল আজ পর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি আলমাস। শিক্ষকের সামান্য ভুলের কারণে বাড়িতে এসে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া তেমন কারো সাথে কথাও বলত না আলমাস।

ধীরে ধীরে একাট সময় পড়ালেখার প্রতি একদমই অমনযোগী হয়ে পড়ে আলমাস। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন তাকে দিয়ে একপ্রকারের জোরপূর্বক এসএসসি পরীক্ষা দেয়ালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৭০ মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়।

আরও পড়ুন: গাংনীতে কৃষকদের চোখে-মুখে ফুলকপির হাসি...

এরপর আলমাস গ্রামের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। কিন্তু শিক্ষকের ভুল তার মন থেকে কখনোই মুছে যায়নি। শুধু পরিবারকে বলতেন শিক্ষকরা ভুল করবে আমি আর কলেজে যাব না। এই চিন্তা চেতনা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে আলমাস। এছাড়া আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আলমাসের পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান গ্রাম পাড়া-প্রতিবেশীরা।

আলমাসের বাবা আলাউদ্দীন বলেন, সন্তানকে উন্নত চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়েছে। আবর্তমানে অন্যের জমিতে বসবাস করছি। সময় মত ঔষধ না খেলে পাগলামি বেড়ে যায় আলমাসের। খেয়ে না খেয়ে হলেও সন্তানের ঔষধের ব্যবস্থা করতে হয় আমাদেরকে।

তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীতে মানসিক চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ করলেও তার উন্নতি হয়নি। সময় সাথে সাথে তার মানসিক অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: এক মণ দুধে গোসল করে কখনো বিয়ে না করার শপথ যুবকের...

আলমাসের মা আছিয়া খাতুন বলেন, ছেলের খাতা শিক্ষকরা ভুল করে দেখে চেয়ারম্যানের ছেলে তন্ময়ের রোল এক করে দেওয়া ও তন্ময়ের বাবার কাছে মিষ্টি খেতে চাওয়ায় কথা শুনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আমার ছেলে। কিছুটা কান্না বিজড়িত কন্ঠে এমনই অভিব্যক্ত প্রকাশ করেছেন আলমাসের মা।

এদিকে সরকারের যে সকল সুবিধা গুলো রয়েছে আলমাস ও তার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে বলে জানান গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী।

সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী বলেন, আলমাস ও তার পরিবারকে আমরা সব ধারণে সুবিধা দিয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে আমাদের কাছে যে সুবিধা আসবে তাকে দিবো।

শিক্ষকের এমন ভুলে আর যেনো কোন শিক্ষার্থীর জীবন ঝরে না যায় এমনটাই চাওয়া উপজেলাবাসীর।

তরিকুল ইসলাম