২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে কি ভাবছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত?

 অনলাইন ডেস্ক    ২৬ অক্টোবার, ২০২৩ ১২:২৩:০০নিউজটি দেখা হয়েছে মোট 24 বার

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে, একই দিন রাজপথ দখলে রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনরা।

বিএনপির দাবি, এ সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে। এতে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হবে ৩৬টির বেশি রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে বিএনপি আসলে কী করতে যাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগই বা কী ভাবছে - এমন প্রশ্নই এখন জনসাধারণের মনে।

আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে সারা দেশে।

গেল ১৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে জনসমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয় ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির কর্মসূচি।

এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে সূচনা হবে সরকার পতনের মহাযাত্রা; এরপর আর থেমে থাকব না আমরা।’

বর্তমানে ২৮ তারিখের এ কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কেননা একই দিন ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনরা। আওয়ামী লীগ নেতারা একদিকে যখন রাজপথ দখলে রাখার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, অন্যদিকে সরকার পতনের দাবিতে মহাসমাবেশকে সফল করতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো।

আরও পড়ুন: বিএনপি সমাবেশের অনুমতি দেবে ডিএমপি কমিশনার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী...

এদিকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সবচেয়ে বড় সমাবেশকে সফল করতে মহানগরের সমন্বয় কমিটিগুলো জেলার সঙ্গে সমন্বয় করছে; এমনকি প্রতিটি জেলা থেকে অধিকসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় আনার কথা বলা হয়েছে দায়িত্বশীল নেতাদের।

এবারের আন্দোলন বিজয় ও সফলতার দিকে যাচ্ছে, এমনটা জানিয়ে গতকাল (২৪ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা ২৮ তারিখ কর্মসূচি দিয়েছি। সেদিন অনেক রাজনৈতিক দলও কর্মসূচি দিয়েছে।আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দেয়ার অধিকার থাকলে, জামায়াতসহ সবারই কর্মসূচি দেয়ার অধিকার আছে। প্রায় ৪০টি দল কর্মসূচি দিয়েছে।

দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এদিন রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

গত ২৩ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, জনজীবন যাতে ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে বলা হয়েছে।’

এদিকে বিএপির পাশাপাশি জামায়াতও আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৩ অক্টোবর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জামায়াত অনিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে সমাবেশের অনুমতি পাননি।

অপর দিকে আওয়ামী লীগ আগামী ২৮ অক্টোবর ঘিরে বিএনপি যেন সহিংস কর্মকাণ্ড করতে না পারে, যেজন্য রাজপথ দখলে রাখার কথা বলছেন। তাদের ভাবনা, বিএনপি ঢাকায় সহিংস কর্মকাণ্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই বিএনপিকে মোকাবিলার লক্ষ্যে এদিন ঢাকায় বিশাল শান্তি সমাবেশে জনসমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্য আমেরিকা থেকে আসছেন ৩ চিকিৎসক...

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। সমাবেশে লোকসমাগম ঘটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আমরা মাঠ ছেড়ে দেব না। কেউ খালি মাঠে গোল দিতে পারবে না’।

গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় শান্তি চায়। আওয়ামী লীগ শান্তি না চাইলে বিএনপি একটা সমাবেশও করতে পারত না।

বিএনপি আবারও ভুল পথে হাঁটছে। দিনক্ষণ দিয়ে কোনো সরকারের পতন হয় না। যারা দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়, তাদের আন্দোলন খাদে পড়বে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

২৮ অক্টোবর রাজধানীসহ সারা দেশে যেন কোনো প্রকার সহিংসতা না হয়, সে জন্য কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগামী চার-পাঁচ দিন বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের দিকে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি সমাবেশের দিন পুলিশ সদস্যদের মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এ কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এছাড়া দেশে বর্তমানে কোনো প্রকার জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চুপচাপ বসে নেই। আমাদের কাজ চলমান। যে কোনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত ডগ সুইপিং স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার।’

অনলাইন ডেস্ক